অ্যামাজন এক টেক মাফিয়ার ইতিহাস

অ্যামাজন এক টেক মাফিয়ার ইতিহাস


Posted on: 2021-04-23 23:07:34 | Posted by: eibbuy.com
অ্যামাজন এক টেক মাফিয়ার ইতিহাস

অ্যামাজন বিশ্বের শীর্ষ একটি ই-কমার্স সাইটের নাম। অ্যামাজনের নাম শুনেননি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। অ্যামাজন মূলত একটি ই-কমার্স সাইট যেখানে বই থেকে শুরু করে আসবাবপত্র অর্থাৎ  প্রায় সকল পন্য বিক্রি করা হয়। বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার অভিজ্ঞতা তেমন একটা ভালো নয়। তবে অ্যামাজনে আপনি কোনো ধরনের প্রতারণার শিকার হবেন না। তারা কাস্টমারদের সুবিধা-অসুবিধার কথা সবার আগে চিন্তা করে। তবে এখন পর্যন্ত (২০২১) অ্যামাজন বাংলাদেশের বাজারে আসেনি।  অ্যামাজন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। অ্যামাজনে যে এ টু জেড সব কিছু পাওয়া যায় সেটার চিহ্ন  অ্যামাজনের লোগোতেই রয়েছে। ১৯৯৪ সালের ৫ই জুলাই জেফ বেজোস অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে অবশ্য নাম অ্যামাজন ছিল না। শুরুতে এটার নাম ছিল ক্যাডবরা। পরে জেফ বেজোস নাম পরিবর্তন করে অ্যামাজন রাখেন।

অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ১৯৬৪ সালের ১২ই জানুয়ারি আমেরিকার নিউ মেক্সিকোতে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে একটা উদ্যোক্তা ভাব ছিল। হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়ে বেজোস ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্রদের জন্য ড্রিম ইনস্টিটিউট নামে একটি এডুকেশনাল ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করেন। আর ছোট বেলা থেকেই কোনো মেশিন বা যন্ত্র কিভাবে কাজ করে তা জানার আগ্রহ তার খুব বেশি ছিল। এইসব বিষয় নিয়ে অনেক ঘাটাঘাটিও করতেন। প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময়ে তার বাসাকে তিনি একটি ছোটোখাটো ম্যাকানিক্যাল ওয়ার্কশপ বানিয়ে ফেলছিলেন। তিনি গ্রাজুয়েশন শেষ করেন প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তিনি কম্পিউটার সাইন্স ও ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন।

পড়াশোনা শেষে বেশ কয়েক জায়গায় তিনি সাফল্যের সাথে চাকরি করেন। চাকুরীজীবনে তিনি খুব অল্প বয়সেই ডি-ই-শ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন।


১৯৯৪ সালে বেজোস চাকুরীকালীন অবস্থায় কোনো একটি প্রজেক্টের কাজে একটি পরিসংখ্যান তার নজরে আসে। সেটি হল তখন ইন্টারনেট ব্যবহাকারীর সংখ্যা খুব বেশি হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তখন তার মাথায় ই-কমার্স সাইটে ব্যবসার চিন্তা চলে আসে। কারণ মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে নানারকম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়। এই ধরুন একজন লোকের একটি চেয়ার, একটি সানগ্লাস আর একটি বই দরকার। এখন সে চেয়ারের দোকানে গিয়ে চেয়ার কিনবে তারপর সানগ্লাস কিনে বইয়ের দোকানে গিয়ে দেখল তার কাঙ্ক্ষিত বইটি নেই। ই-কমার্স ব্যবসায় কিন্তু এ ধরনের ঝামেলা নেই। যার কারণে মানুষ অনলাইনে বেচাকেনার দিকে ঝুঁকছে। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছেন বেজোস।

বেজোস তার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় নেমে পড়েন। তখন এই ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসার তেমন একটা প্রচলন ছিল না। সুতরাং এই ব্যবসাটা শুরু করার ব্যাপারটা পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তিনি অ্যামাজনে প্রথমে পুরাতন বই বিক্রি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। জেফ বেজোস তার এই ব্যবসায় খুব অল্প সময়েই ব্যাপক সাড়া পেয়ে যায়। অ্যামাজন প্রতিষ্ঠার প্রথম ৩০ দিনেই তারা কোনো ধরনের প্রচার প্রচারণা ছাড়াই  বিশ্বের অনেকগুলো দেশে পন্য বিক্রি  করে। যা ছিল তাদের কল্পনার বাইরে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তারা তাদের ব্যবসাকে পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা ই-কমার্স ব্যবসায় প্রচুর সম্ভাবনা দেখে পাকাপোক্তভাবে ব্যবসায় নামে ১৯৯৭ সালের পর। পরে অ্যামাজনে সিডি ডিভিডি, ভিডিও গেম, সফটওয়্যার, ইলেকট্রনিক পন্য, আসবাবপত্র, গহনাগাঁটি তারপর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি শুরু করে দেন।

তিনি এখানেও ব্যাপক সাড়া পেয়ে যান। সেখান থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অ্যামাজনের শুরুতে জেফ বেজোসের কাছে পুঁজি হিসেবে খুব বেশি টাকা ছিল না। তার পুঁজির টাকা জোগাড় করতে বড় ভুমিকা রেখেছিল বেজোসের বাবা মাইক বেজোস এবং তার মা জ্যাকলিন বেজোস। তারা তাদের অবসর ভাতা হিসেবে পাওয়া অর্থ বেজোসকে দেন ব্যবসা শুরু করতে। তারা প্রায় ৩ লক্ষ ডলার দিয়েছিল বেজোসকে। পরে বেজোস তার আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের কাছ থেকে আরও ৭ লক্ষ ডলার নিয়ে মোট ১ মিলিয়ন ডলার নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করেন।

এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, ফ্রান্স, ভারত, জার্মানি, ইটালি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপানসহ আরও কয়েকটি দেশে তারা পন্য সামগ্রি বিক্রি করে আসছে। তাছাড়া অন্যান্য দেশে তাদের কিছু পন্যের  শিপিং ব্যবস্থা রয়েছে। অ্যামাজনের সদর দপ্তর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটনের সিয়াটেলে। এবং ২০১৯ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী অ্যামাজনের মোট সম্পদের পরিমাণ ২২৫.২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে অ্যামাজনে বর্তমানে প্রায় ৭ লক্ষ লোক কাজ করছে।
বর্তমানে অ্যামাজনের কয়েকটি পরিসেবা নিচে তুলে ধরলাম..
১.অ্যামাজন ড্রাইভ
২.অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিস
৩.অ্যামাজম প্রাইম
৪.অ্যামাজন ফ্রেশ
৫.অ্যামাজন এনেক্সা ইত্যাদি।

এগুলো ছাড়াও অ্যামাজনের অধীনস্থ অনেকগুলো  প্রতিষ্ঠান আছে অনেকগুলো। যেমম....
১.অ্যামাজন বুকস
২.অ্যামাজন গেইম স্টুডিও
৩.অ্যামাজন এয়ার
৪.অ্যামাজন ল্যাব
৫.বডি ল্যাবস
৬.অ্যামাজন লজিস্টিক
৭.অ্যামাজন পাবলিশিং
৮.আইএমডিবি
৯.হোল ফুড মার্কেট   ইত্যাদি।

সব কিছুর পরেও অ্যামাজন তাদের পরিধি  প্রতি বছর বড় করেই চলছে। প্রতি বছর তারা নতুন নতুন প্রতিষ্ঠানকে কিনে নিচ্ছে। বিশেষ করে উদীয়মান প্রতিষ্ঠানগুলোকেই কিনে নিচ্ছে। অবশ্য এ কাজটি শুধু অ্যামাজনই না, বিশ্বের অন্যান্য জায়ান্টরা যেমন ফেসবুক, অ্যাপল, গুগল, আলিবাবাও এ কাজটি করে যাচ্ছে।এখন পর্যন্ত অ্যামাজনের নেট আয় তাদের সমকক্ষ প্রতিষ্ঠান অ্যাপল, গুগল, ফেসবুক, মাইক্রোসফটের অনেক কম হলেও রেভিনিউ এর দিক দিয়ে অনেকটা এগিয়ে আছে।  এই অ্যামাজনের হাত ধরেই জেফ বেজোস বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন।

অ্যামাজন থেকে সকল পন্য কিনতে না পারলেও কিছু পন্য আপনি বাংলাদেশে আনতে পারবেন। তবে এখনো পর্যন্ত অ্যামাজন তাদের বেশিরভাগ পন্য বাংলাদেশে শিপিং করে না। যে প্রোডাক্ট কিনবেন সেগুলো কিনতে আপনার ডুয়াল কারেন্সির কার্ড প্রয়োজন হবে। যেহেতু অ্যামাজন থেকে তাদের বেশিরভাগ পন্য আপনি বাংলাদেশে আনতে পারবেন না (২০২১ সাল অনুযায়ী), তাই আপনি অ্যামাজনের বিকল্প হিসেবে আলি এক্সপ্রেস থেকে পন্য কিনতে পারবেন। বাংলাদেশে আলি এক্সপ্রেস থেকে পন্য ক্রয় করা অনেকটা সহজ। আলি এক্সপ্রেস থেকে কিভাবে পন্য ক্রয় করবেন সেটা আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে দিয়েছি। দেখে আসতে পারেন।

আজকের আলোচনা নিয়ে কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।


Related Post

জনপ্রিয় পণ্য

সাম্প্রতিক পণ্য

Leave a Comment:
alibaba & Import Export expert

সি এন্ড এফ, আমদানি, আলিবাবা নিয়ে যেকোনো সমস্যায় আমাকে ফেসবুকে মেসেজ করুন

এখানে ক্লিক করুন
2017 © 2024 eibbuy. All Rights Reserved.
Developed By Fluttertune react js next js